রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
রূপালী বার্তা।।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে যুক্তি তৈরির ক্ষমতা, দ্রুত জবাব তৈরির মতো মানসিক ক্ষমতা কমতে থাকে। নাম, ফোন নাম্বার, জায়গার নাম মনে রাখতে পারেন না? কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়লেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। সহজ কিছু কায়দা-কানুনের মাধ্যমে মগজের শক্তি বাড়ানো যায়-
১.ব্যায়ামে মস্কিষ্কের আকার বাড়ে- এটা খুব সত্যি কথা। শরীরচর্চা করলে দেহের পেশির সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়। আর কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের ফলে মগজে বেশি হারে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়। আর আপনি যদি খোলা জায়গায় ব্যায়াম করেন, তাহলে বাড়তি পাওনা হলো ভিটামিন-ডি।
২.হাঁটাচলায় বাড়ে স্মৃতিশক্তি- বহু গবেষণায় এটা প্রমাণিত। অভিনেতারাও এই কাজটা করে থাকেন। কোনো শব্দ বা বাক্য যদি আপনি হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা বহুদিন ধরে আপনার মনে থাকবে। এরপর কোন বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করতে হলে সেটা হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। কিংবা একটু বাইরে ঘুরে আসুন।
৩.মগজের শক্তির জন্য বেছে নিন সঠিক খাবার- আপনার খাবারের ২০% শর্করা এবং শক্তি আপনার মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের কাজের পুরোটাই নির্ভর করে তার গ্লুকোজের মাত্রার উপর। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রায় হেরফের হলে আপনার মনেও দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যেসব খাবার আপনার খুব পছন্দ সেগুলো খেলে আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে রাসায়নিক বস্তু ছড়িয়ে পড়ে। আসলে, পাকস্থলীকে অনেক সময় ‘দ্বিতীয় মগজ’ বলে ডাকা হয়। পেটে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার ঢুকলে এসব অণুজীবের মাধ্যমে তার সুফল মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছায়।
৪.খুঁজে নিন অবসর- স্বল্পমাত্রার মানসিক চাপ আসলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে বিপদের সময় বা জরুরি প্রয়োজনে পরিস্থিতিকে দ্রুত মোকাবেলার শক্তি পাওয়া যায়। কর্টিসল হরমোনের কারণে দেহ-মন চাঙা হয় এবং মনোযোগের একাগ্রতা বাড়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিস্কের জন্য খুবই খারাপ। সুতরাং কাজের ফাকে অবসরের সময় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫.নতুন কিছু করুন- মগজের শক্তি বৃদ্ধির একটা পথ হলো নতুন কোন কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করা। ছবি আঁকা কিংবা বিদেশি ভাষা শিক্ষার মধ্য দিয়ে এটা করা সম্ভব।
৬.বিছানায় শুয়ে পরীক্ষার পড়া- দিনের বেলা যখন আপনি নতুন কিছু শিখছেন, তখন আপনার মস্তিষ্কের এক স্নায়ুকোষের সাথে নতুন আর একটি স্নায়ুকোষের সংযোগ তৈরি হয়। আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন সেই সংযোগ আরও জোরদার হয় এবং যা শিখেছেন তা স্মৃতি হিসেবে জমা হয়।
৭.ঘুম যখন ভাঙল- শুরুতে আছে দিনের শুরুর সাথে তাল মিলিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠুন। ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। দৈনিক পাঁচ ঘন্টার কম ঘুম হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ১০ ঘন্টার বেশি ঘুম হলে মস্তিষ্ক সজাগ হওয়ার সময় পায় না। কিন্তু দিনের পুরোটাকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে কীভাবে আপনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তার মধ্যে।
৮.সুরের মাঝে লুকিয়ে আছে শক্তি- সঙ্গীত যে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে, তার প্রমাণ রয়েছে। কেউ গান শোনার সময় যদি তার মস্তিষ্কের ছবি তোলা যায়, তাহলে দেখা যাবে পুরো মস্তিষ্ক সুরের প্রভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মস্তিষ্ক সঙ্গীতের স্মৃতি দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।